![]() |
Bangla Golpo 2020 |
পরকীয়া দায়ী – বাংলা ছোট গল্প ২০২০ | Bangla Notun Golpo 2020 । Short Story In Bengali
Porokia Bangla Golpo (বাংলা গল্প পরকীয়া)
“আমি তোকে খুব ভালোবাসি স্নেহা। তোর সাথে সারাজীবন কাটাতে চাই। তোর সব সুখ-দুঃখে আমি তোর পাশে দাঁড়াতে চাই। তুই কি আমার হাতটা ধরে জীবনের বাকি পথটা চলতে পারবি?” কলেজের ফেয়ারওয়েলের দিন অপূর্ব সবার সামনে হাঁটু গেঁড়ে বসে প্রেমের প্রস্তাব দিল স্নেহাকে।
স্নেহা প্রথমে অবাক। তারপর খুব সহজেই বললো, “না রে, এটা আমার পক্ষে সম্ভব না। আমি কোনোদিন বিয়েই যে করবো না।”
স্নেহা আর অপূর্বর “কেনো?” প্রশ্নটা শোনার জন্যও দাঁড়ায়নি। তাড়াতাড়ি পা চালিয়ে কলেজ থেকে বেড়িয়েই একটা ট্যাক্সি নিয়ে বাড়ি ফিরে আসে। বাড়ি ফিরেই নিজের ঘরে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়ে স্নেহা। তারপরেই ভেসে ওঠে ওর চোখের সামনে একের পর এক অতীতের কালো দিনগুলো।
স্নেহা জন্মের পর থেকেই দেখে এসেছে ওর বাবা-মায়ের মধ্যে অশান্তি। ওর বাবা-মা সবসময় ঝগড়াঝাটি
করতো। মাঝেমাঝে ওর মা ঘর ছেড়ে চলে যেত, নাহলে ওর বাবা ঘর ছেড়ে চলে যেত। তারপর একসময় শুরু হলো, স্নেহার বাবার অনুপস্থিতিতে বাড়িতে একজন ভদ্রলোকের আসাযাওয়া। সে ছিল স্নেহার মায়ের প্রেমিক। স্নেহার বাবার অনুপস্থিতিতে ভালোই চলছিল স্নেহার মায়ের প্রেম। মায়ের শাসানির জন্য
ও বাবাকে কিচ্ছু জানাতে পারেনি।
স্নেহার বয়স যখন প্রায় দশ তখন একটা ঘটনা ঘটে। স্নেহার মায়ের প্রেমিক এসেছিল ওদের বাড়িতে। স্নেহা নিজের ঘরে পড়াশোনা করছিল। আর স্নেহার মা রান্নাঘরে কিছু বানাতে ব্যস্ত ছিল। এই সময় মায়ের প্রেমিক ওর ঘরে আসে। “সোনামোনা” করে ওর গায়ে হাত বোলাতে শুরু করে। স্কুলে “ব্যাড টাচ” এর ব্যাপারে জানাতে, স্নেহা বুঝে গিয়েছিল যে লোকটা খারাপ ইঙ্গিতে ওকে স্পর্শ করছে। বেশি বাড়াবাড়ি হতে না দিয়ে স্নেহা ছুটে গিয়েছিল ওর মায়ের কাছে।
“মা, ওই লোকটা ভালোনা। আমাকে ব্যাড টাচ করে।” স্নেহা কাঁদতে কাঁদতে বলোছিল ওর মাকে।
“কি? ব্যাড টাচ?” বলেই স্নেহার মা ওর গালে সপাটে এক চড় মেরেছিলেন।
স্নেহা কিছুক্ষণের জন্য চুপ হয়ে গিয়েছিল। বুঝতে পারেনি, এটা কোন মা!
স্নেহা তাও দমে যায়নি। সেদিন আর কোনো ভয় না পেয়ে বাবাকে অফিস থেকে আসার পরে সবটা জানিয়ে ছিল। ফলাফল?
স্নেহার মা আর বাবার মধ্যে তুমুল ঝামেলা বেঁধেছিল। স্নেহার মা ওকে অনেক মারধোরও করেছিল ওর বাবাকে সব বলে দেওয়ার জন্য। কিন্তু সেদিন ওর ঢাল হয়ে দাঁড়িয়েছিল ওর বাবা।
স্নেহার বাবা নিজের স্ত্রী আর তার প্রেমিকের নামে পুলিশে মামলা দায়ের করেছিল। কিন্তু কিছু লাভ হয়নি। সেই সময়ই সুপ্রিম কোর্ট রায় দিয়েছিল ষে পরকীয়ায় কারোও শাস্তি হবে না।
অভাবে সেই মামলাও খারিজ হয়ে গিয়েছিল।
অগত্যা, স্ত্রীয়ের চরিত্রহীনতা প্রমাণ করে স্নেহার বাবা ওর মাকে ডিভোর্স দিয়েছিল। তার সাথে মায়ের চরিত্র খারাপ হওয়ায় স্নেহার কাস্টডি পেয়েছিল ওর বাবা। প্রথম প্রথম স্নেহার খুব মন খারাপ করতো ওর মায়ের জন্য। কিন্তু মায়ের প্রতি রাগে, স্নেহা দেখাও করতে চাইতো না কখনো।
স্নেহার বয়স যখন তেরো, তখন ওর বাবা ঠিক করলো যে, সে আবার বিয়ে করবে। একা একা পুরুষ মানুষের জন্য নাকি মেয়েকে মানুষ করা কষ্টকর হচ্ছে।
স্নেহার অমতেই বাড়িতে সৎ মা এসেছিল। তাকে অবশ্য কখনোই স্নেহা “মা” বলে ডাকেনি। সেই সৎ মা ছিল আরেক জিনিস। তেরো বছরের কিশোরী মেয়েটাকে দিয়েই গর বাবার অনুপস্থিতিতে সব কাজ করাত । আর যখন স্নেহার বাবা থাকতো সামনে, তখন সে কি আদর!
আসতে আসতে স্নেহার জীবনটা দুর্বিসহ হয়ে উঠছিল। তারপর একদিন, সবকিছু অতিরিক্ত হয়ে যায়। স্নেহার সৎ মামা নিজের দিদির অনুমতিতেই স্নেহাকে ধর্ষণ করার চেষ্টা করেছিল।
কোনোমতে নিজেকে বাঁচিয়ে স্নেহা বাড়ি ছেড়ে সেদিন বেড়িয়ে গিয়েছিল। নাহ! ওইবার স্নেহা আর যায়নি ওর বাবার কাছে ব্যাপারটা জানাতে। কারণ ও জানত যে, এর ফলাফলে গালে চড়ই পড়বে।
ভবঘুরের মতো ঘুরতে ঘুরতে স্নেহা গিয়ে পড়েছিল কয়েকজন কিন্নরের হাতে। তারাই ওকে নিয়ে গিয়ে নিজেদের যথাসাধ্য দিয়ে ওকে মানুষ করেছে। আজ স্নেহা তাদের কাছেই থাকে
বাবা-মায়ের বৈবাহিক সম্পর্কের অবনতি এবং তাদের ভুল সিদ্ধান্তে স্নেহার যে ক্ষতিটা হয়েছে, তা কোনোদিন ভরাট হবেনা। কিন্তু যারা বৈবাহিক সম্পর্কের ধারেকাছেও ঘেষতে পারেনা, আজ তাদের কাছেই স্নেহা সুখী।