আত্মসম্মান – বাংলা নতুন গল্প ২০২১ | Self Respect Story In Bengali | Bangla Choto Golpo 2021
আত্মসম্মান – বাংলা নতুন গল্প ২০২১ | Self Respect Story In Bengali | Bangla Choto Golpo 2020
![]() |
Bangla Choto Golpo 2021 |
কিরে রিয়া বেশ অনেকদিন তো হল তোর ব্রেকআপ হয়ে গেছে। সেদিন একটা ম্যাগাজিনে তোর দেওয়া
সাক্ষাৎকারে দেখলাম তোকে এই নিয়ে প্রশ্ন করেছে একজন সাংবাদিক।| যাক বাদ দে এবার অন্তত ওই
দীপমাল্যর কথা ভূলে যা। কাকু কাকিমার পছন্দমত একটা ছেলে দেখে বিয়ে করে ঘর সংসার শুরু কর।
নতুন সংসার সামলে তারপর বাচ্চাকাচ্চা হোক দেখবি পুরনো কথা সব হাওয়ায় ভেসে গেছে। শুধু গান
বাজনা নিয়ে থাকলে হবে?” একটি নামকরা কফিশপে বসে কলেজ জীবনের বান্ধবী রিয়াকে কথাগুলো
বলছিল দিশা।
এমনিতে মুঠোফোন বা সোশ্যাল মিডিয়াতে ওদের দুজনের যোগাযোগ থাকলেও অনেকদিন পর হঠাৎই ওদের দুজনের দেখা হল গড়িয়াহাট এলাকার এক শপিংমলে টুকটাক কেনাকাটা করতে এসে। দিশা বর্তমানে বিবাহসুত্রে চেন্নাইয়ের বাসিন্দা। মাঝেমধ্যে কলকাতায় বাপের বাড়ি আসে। পূরনো বন্ধুবান্ধবদের সাথে সেভাবে দেখাসাক্ষাৎ হয় না। আজ তাই রিয়ার সাথে দেখা হতেই কফিশপে আড্ডার সুযোগটা হাতছাড়া করতে চায়নি ও। সেইসাথে চলতে থাকে নানা আলোচনা, গায়িকা রিয়ার ব্যক্তিগত জীবনও বাদ যায়না সেখানে । আসলে এই সোশাল মিডিয়ার দৌলতে প্রেম,বিরহ ব্যক্তিগত সবকিছুই এখন সকলের কাছে জলের মত পরিষ্কার। কোথাও না করার বা এড়িয়ে যাবার সুযোগ নেই। অগত্যা তাই ক্যাপুচিনোর কাপে আলগোছে চামচটা ঘোরাতে ঘোরাতে এতক্ষণ ধরে দিশার কথাগুলো শুনছিল রিয়া। আচ্ছা শিল্পী বলে কী ব্যক্তিগত বলে কিচ্ছুটি থাকতে নেই।
হঠাৎই ও আর্ডুল চালানো থামিয়ে দেয় রিয়া তারপর শান্ত গলায় বলে, নারে এগ্রই আমি বেশ আছি।সম্পর্কের বেড়াজালে নিজেকে আর আটকাবো না। শুন্যতা আমার ভালো লাগে। একলা পথ চলার, আপন শর্তে বাঁচার মধ্যে একটা আলাদা আনন্দ আছে। অন্যের তৈরি করা রুটম্যাপ দেখে অনেকেই পর্বতশৃঙ্গ জয় করতে পারে কিন্তু নিজে রাস্তা বানিয়ে যদি সেটা জয় করা যায় তাহলে আনন্দটা দ্বিগুণ হয়। শূন্যতা আমাকে অনেককিছু শিখিয়েছে রে..”
__”কিন্ত কেনো বল তো?”বলে দিশা।
সানগ্লাসটা ঠিক করতে করতে রিয়া মৃদু হেসে বলে,তাতে অন্যের চাহিদা পূরণ করার তাগিদ থাকেনা বলেই। আজ রবি আর ওর পরিবারের চাহিদা পূরণ করতে গেলে আমার নিজের প্রথম ভালোলাগা গানটাকেই ছেড়ে দিতে হত। কিন্তু আমি রাজি নই। ওকে ছেড়ে সেদিন শুন্য থেকে শুরু করেছিলাম বলেই আজ আমি নিজের গানের ব্যান্ড নিয়ে এই জায়গায় পৌঁছেছি আরো অনেক পথ চলার বাকি। আচ্ছা বলতে ভুলেই গেছি তুই তো এখন কদিন কলকাতায় আছিস।আগামী রবিবার কলামন্দিরে আমার প্রোগ্রাম আছে আসিস কিন্তু।’আজ আসি আমার রিহার্সাল আছে…”কথাগুলো বলে ইনভাইটেশন কার্ডটা দিশার হাতে ধরিয়ে দেয় রিয়া। তারপর বেরিয়ে যায় দরজা ঠেলে। বাইরে তখন প্রধর দাবদাহে চারদিক ঝলসে যাচ্ছে। দিশা বলে,”সত্যি জেদটা তোর আগের মতই রয়ে গেলো রে রিয়া।”
-এটাঠিক জেদ নয় রে। আত্মসম্মান বাঁচিয়ে রাখার লড়াই আর বাকিটা নেহাতই ব্যক্তিগত”; কথাগুলো শেষ করে সানগ্লাসটা চোখে লাগিয়ে নিয়ে গিটারটাকে কাঁধে নিয়ে দৃপ্ত ভঙ্গিতে হেঁটে চলে রিয়া সামনের দিকে। শীততাপ নিয়ন্ত্রিত কফিশপের সাউন্ড সিস্টেম থেকে ধিমি সুরে বেজে ওঠে,” প্রেমে পড়া বারণ/কারণে অকারণ/ওই মায়া চোখে চোখ রাখলেও/ফিরে তাকানো বারণ।।