Ami Nimno Moddhobitto Bolchi Lyrics (আমি নিম্নমধ্যবিত্ত বলছি) | Fuad Swanam | Shamsuzzoha
![]() |
Ami Nimno Moddhobitto Bolchi Lyrics |
Ami Nimno Moddhobitto Bolchi Poem Lyrics was written by Fuad Swanam. Ami Nimno Moddhobitto Bolchi Kobita recitation by Shamsuzzoha.
Credits
- Poem: Ami Nimnomoddhobitto Bolchi
- Writer: Fuad Swanam
- Recitation: Shamsuzzoha
Ami Nimno Moddhobitto Bolchi Lyrics In Bengali
আমার বেশ মনে আছে,
বাবা খুব ভোরে বেড়ুতেন আর ফিরতেন
সবার ঘুমাবার পর।
না প্রতিদিনই নয়,
এই ধরুন, মাসের দশ থেকে একুশ-বাইশ
তারিখ অবধি।
বাড়িওয়ালার সামনে পড়াটা এড়াতেই
এই ভোর পাঁচটা-বারোটা অফিস।
বাবা বেশ রাগী ছিলেন,
আমরা বাবাকে ভয়ে কিছু প্রশ্ন করতে
পারতাম না।
পারলে নিশ্চয়ই জিজ্ঞেস করতাম,
বাবা, তুমি রোজ অফিসের আগে,
ছুটির পরে সংসদ ভবনের
পাম ট্রিগুলোর নীচে অন্ধকারে স্যাঁতস্যাঁতে
রাস্তায় বসে মাথা হেঁট করে কি ভাবো?
কে তোমায় সকালের নাস্তা বানিয়ে দেয় বাবা?
কোনো কোনো দিন লাঞ্চ কি করো কখনো?”
বাড়ি ভাড়া দেবার তারিখ উত্তীর্ণ হলেই,
আমরা দু’ভাই গিয়ে দাঁড়াতাম
বাড়িওয়ালার সামনে করুণ মুখ করে।
উনি গলে যেতেন,
এই হঠাৎ করুণ মুখ করার ব্যাপারটা
আমরা বেশ ভালোই রপ্ত করে ফেলেছিলাম সে বয়সেই।
মটর বাইক পাশ কেটে বের হলেই,
আমি হাঁ করে চেয়ে থাকতাম।
একদিন বাবা বলেছিলেন,
“শুনো বেটা, নিম্ন মধ্যবিত্তদের স্বপ্ন দেখবারও একটা
লিমিট থাকে রে বোকা।”
জবাবে বাবা কে সেদিন চমকে দিয়ে বলেছিলাম,
বাবা, জীবনের মৌলিক চাহিদাগুলির অপূরণের
আক্ষেপ থেকে জন্ম নেয়া সুপ্ত বাসনাগুলি
যদি হঠাৎই ঘুম ভেঙে লাফ দিয়ে জেগে উঠে
হাত ধরাধরি করে হাঁটতে চায়?
সেও কি নিম্নমধ্যবিত্ত হিসেবে অন্যায়ের সামিল হবে?
নাকি সে বিত্তশালী হয়ে উঠবার ধৃষ্টতা?
বলেই ভাবলাম,
কি যে সব ভুলভাল বকে ফেললাম বাবার সামনে
বেশী বলে ফেললাম না তো!
আমি নিম্ন-মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলে,
শিক্ষা, সততা আর আদর্শই যাদের
একমাত্র সম্বল,
তাদের অন্তত বাবার মুখের ওপর
এমন বাগ্মিতা আমাদের মানায় না।
গলির মুখে তিন রাস্তার মোড়ে
কার্তিক বাবুর মুদির দোকান।
তোমাকে ভয়ে কোনদিন বলিনি বাবা,
ভীষণ হাস্যোজ্জ্বল লোকটির মুখ,
আষাঢ়ের আকাশের মতো গোমড়া হয়ে যেতো
আমাদের বাকির স্লিপ ধরা হাতগুলো দেখলে।
একটা লজেন্সও কোনদিনও চাইতে পারিনি
বাকির খাতার কারণে।
বাকিতে মৌলিক চাহিদা মেটাতে মেটাতে
শৈশব যে কোথায় ছুটে পালিয়েছিল,
তা টের পেতে পেতে, তখন আমিও এক বাবা।
চালের, ময়দার ঠোঙাগুলোকে
কেটে কেটে সেলাই করে খাতা বানাতাম,
বছর শেষে আবার তাদের বিক্রি করে
নতুন ক্লাসের বই কেনা।
নতুন বই কেনার কথা তো কস্মিনকালেও
ভাবতে পারিনি।
আমীষ বিহীন পেঁপে ভাজি,
পেঁপের ঝোল, পেঁপের ভর্তা খেয়ে খেয়ে
কতো দিন-রাত পার করেছি,
অন্য কিছুর চড়া আঁচে আমাদের
বাজারের ব্যাগ জ্বলে যেত সেসময়।
অন্য কিছুর সামর্থ্য ছিলো না বলে।
আমাদের পিঠাপিঠি দু-ভাইয়ের একটিই
শখের জিন্স প্যান্ট কিনতে পেরেছিলাম
তিনশত টাকা খরচা করে।
তাও, একমাসের একটি টিউশুনির বেতন দিয়ে।
মা সেটা আলমারিতে তুলে তুলে রাখতেন।
যদি কোথাও দাওয়াত পড়ত,
আমরা ভাগ করে নিতাম
কে গায়ে হলুদে যাবে সেটা পড়ে?
আর কে বরযাত্রী যাবে?
এমন কোনো অনুষ্ঠান ছিলো না
যে, আমরা দু’ভাই একসাথে এটেন্ড করেছি।
উপহার কেনার সামর্থ্য
কোনদিনই আমাদের ছিলো না।
তাই, আমরা শুধু বরযাত্রী বা গায়ে হলুদেই যেতাম।
আমি একজন নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান।
যাদের, কোনো চাহিদা থাকতে নেই।
আমাদের মা তবু খুব সুখী ছিলেন,
কারণ ক্ষুধা লাগলে,আমরা ভাতের মাড়
লবণ ছিটিয়ে খেতে পারতাম।
স্কুলের টিফিনের জন্য জেদ করেছি কিনা
ঢের সন্দেহ আছে!
অন্যদের দেয়া সেকেন্ড হ্যান্ড জামাতেই
নিজেদের মানিয়ে নিতে শিখেছিলাম।
আমাদের মাঝে ছিলো
পদ্ম পুকুরের মতো ভীষণ লজ্জা।
ক্যাম্পাসে বা আত্মীয় স্বজনদের কাছে
আমাদের অবস্থান ছিলো সুদৃঢ়।
বাইরে থেকে দেখে বোঝার উপায় ছিলো না
আমাদের ভেতরের দৈন্য দশা।
নুন আনতে পান্তা ফুরোয়।
কারণ, শিশুবেলা থেকেই আমাদের দুটো
শিক্ষা দেয়া হয়-
এক, আমরা নিম্ন-মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান।
আর দুই, আমরা সম্ভ্রান্ত পরিবারকে ধারণ করি।
আমাদের বুক, পেট, তল পেট, উদর,
বৃহদান্ত্র, ক্ষুদ্রান্ত্র সব ক্ষুধার তাড়নায় ফেটে
ছিন্নভিন্ন হয়ে গেলেও,
আমাদের মুখে সবসময় চাঁদের হাসি
লেপ্টে থাকবে।