Fossils Rupam Islam Short Biography (রূপম ইসলাম ও ফসিলস কে নিয়ে কিছু কথা)
![]() |
Rupam Islam Biography |
সালটা ছিল ১৯৯৯। পাঁচজন তরুণ তুর্কীর প্রথম লাইভ কনসার্ট। রীতিমতো মঞ্চের আলো নিভে এল। তিনি এলেন। ছোঁটো করে চুল ছাঁটা। পরনে একটা জিন্স আর টিশার্ট। ছিল না তো কিছুই। একমুঠো প্রাপ্তি না, একমুঠো জনপ্রিয়তা না। এক দৃঢ় প্রত্যয় ছাড়া। আর সেটুকুই সম্বল করে তিনি শুরু করলেন-
“খোঁড়ো আমার ফসিলস, অনুভূতির মিছিল।
প্রতিক্রিয়াশীল, কোনো বিপ্লবে –
শোনো তুমি কী আমার হবে?
বলো তুমি কী আমার?”
রীতিমতো হৈ-হট্টগোল শুরু হয়ে গেল। এতগুলো মানুষ বসে আছে কখন থেকে, একটা ঝকমারি হিন্দী গান চলবে কী তা নয়, কীসব বাংলা রক্ ফক্।
‘আরে ও দাদা, নামুন তো। কী হচ্ছে এসব। নামুন নামুন’
‘এ তো শালা পুরো টাকাটাই বরবাদ করে দিলো হে’
‘কী ছ্যাঁচড়ামি বলুনতো দাদা এগুলো, কী ক্যালানে গান গাইছেন।
নেমে যেতে হল। পাঁচজনকেই নেমে যেতে হল।তিনি নেমে গেলেন। হ্যাঁ ১৯৯৯ – এর একটা রাত্রির সাংস্কৃতিক মঞ্চ থেকে তিনি নেমে গেলেন।
মঞ্চে লাগানো চার অক্ষরের লেখা ‘ ফ সি ল স ‘ ব্যানারটুকু খুলে নেওয়া হল।
পাঁচটা ছায়ামূর্তি ফিরে গেল। কিন্তু তারা কী নিয়ে ফিরেছিল সেদিন? জানিনা!
কী নিয়ে ফিরেছিল? একরাশ ক্ষোভ? না।
একশরীর হতাশা? না।
লড়াই ! হ্যাঁ লড়াইয়ের পরিকল্পনা নিয়ে ফিরেছিল।
প্রত্যয়! আশা! সে তো অনেক আগে থেকেই বাসা বেঁধে নিয়েছিল শরীরে। নাহলে কী আজ আলো নিভে এলে হাজার হাজার জনসমুদ্রের ভীড়ে, কোনো এক ক্ষুদ্র জায়গায় দাঁড়িয়ে চিৎকার করতে পারতাম-
“তবু আশা এক অদ্ভূত অব্যয়
এই আশাটুকু আমাদের সঞ্চয়
আজও আশা আছে বলে হেরে গেছে
যত হেরে যাওয়ার ভয়।”
আমি ইশ্বর দেখিনি। কিন্তু ওই মানুষটা যখন একমাথা ঝাঁকড়া চুল নিয়ে আলো আঁধারি মঞ্চে দাঁড়িয়ে বলছেন,
“জীবন চলছে না আর সোজাপথে
দেখো আজও হাসি কোনোমতে
বেঁচে গেছি বলি হতে হতে।”
সেখানে আমি কেন, আপনারও প্রাণপ্রণ সাধ্য নেই সেই কণ্ঠের সাথে সুর মিলিয়ে বাকিটুকু গেয়ে না ওঠার-
“হয়তো মরে গেলে হতো বেশী ভালো
কেন এতসুখ ফেলে গেলো
জীবনের সেরা স্মৃতিগুলো।”
কিংবা আবার যখন তিনি গেয়ে ওঠেন,
“বন্ধুদের ভীড়েও একলা একলা আমি
খুঁজে ফিরি লক্ষ্য আমার।
পাল্টাচ্ছে না এই অবস্থাটা
যদিও পাল্টে যাওয়াই দরকার”
মনে হয় এ তো আমারই ভাষা, আমারই বলা কথা। এতদিন ধরে যা শুনতে চেয়েছি অবস্থার বিরুদ্ধে, এ যেন তারই আহ্বান!
সেই বিপুল জনবিস্ফোরণ যেন আমারই শত সহস্র প্রতিমূর্তি।
সেই বিপুল আর্তধ্বনি যেন আমারই অন্তঃস্থলে সঞ্চিত থাকা গর্জে ওঠার ভাষা। উদ্দামতার ভাষা।
সেই লক্ষ লক্ষ ফ্ল্যাশের আলো যেন আপনারই এতদিনকার অন্ধকার জীবনে সূর্যালোকের প্রবেশ ঘটালো।
এর বেশী আর কী চেয়েছেন আপনি!
এক আলো – আঁধারি মঞ্চে দাঁড়িয়ে তিনি ক্ষণিকের মধ্যে সেখানেই একটা অন্য জীবনজগৎ সৃষ্টি করে ফেলেন। সমস্ত শ্রোতামন্ডলী যেন মুগ্ধতায় তার কথামতোই উঠছেন, আবার বসছেন।
প্রতিটি মানুষের আত্মা, চেতনা যেন বন্ধক নিয়ে নিয়েছেন মানুষটি নিজের গানের দরবারে। ফসিলসের খাতায়। কেউ হাসছেন, কেউ গাইছেন আবার কেউ জড়িয়ে ধরে অঝোরে কাঁদছেন।
ম্যাজিক! ম্যাজিক! এর নাম ম্যাজিক ছাড়া আর কী দেওয়া যেতে পারে!
আমি এর চেয়ে বড়ো ম্যাজিশিয়ান আর দেখিনি।
“আরো একবার চলো ফিরে যাই
পাহাড়ের ওই বুকেতে দাঁড়ায়
আকাশের হাতছানিতে সাড়া দিই
কি হবে, না ভেবে।
আরো একবার হাতটা ছুঁয়ে দেখ
আজও আমাদের ইচ্ছেগুলো এক
আমি জানি তুই আবার হারাবি নিজেকে
নিজেকে”
এটাই তো ভালোবাসার জন্য ভালো ভাষা।
এর নাম যদি ভালোবাসা না হয়, তবে আমি ভালোবাসা মানি না।
“সততার বিলাসিতা আর নয়
এটা যুদ্ধ জেতবার সময়
দেওয়ালে যদি পিঠ ঠেকে যায়
তবে ঘুরে দাঁড়াতে হয়”
এটা যদি ঘুরে দাঁড়ানোর স্লোগান না হয়, পৃথিবীতে বিপ্লব বলে আমি কিছু মানি না।
“তুমি কী নিজেকে ব্যর্থ ভাবো?
তোমাকে আমি এ গান শোনাবো।
আলোকের গতি আমার গানে
ছুটবে নতুন সূর্য টানে”
এটা যদি ব্যর্থতা ছুঁড়ে ফেলার গান না হয়, তবে এ পৃথিবীতে সাফল্যের কোনো অস্তিত্ব আছে বলে আমি মানি না।
হ্যাঁ এটাই ফসিলস্। এটাই রূপম ইসলাম।
একদিন যে পাঁচ ছায়ামূর্তিদের ফিরে যেতে হয়েছিল, আজ তাদের সাফল্য অনেকটা এরকম-
‘আমার কাছে ডিগ্রি আছে, চাকরি আছে, লোনে কেনা ১০৫৫ স্কোয়ার ফিটের ফ্ল্যাট আছে৷ তোর কাছে কী আছে?’
-আমার কাছে ফসিলস কনসার্ট-এর প্রি-বুকিং আইডি আছে৷
আজ ৯-ই জানুয়ারী।
আজ একটা বিপ্লবের জন্মদিন। একটা দীর্ঘ লড়াইয়ের জন্মদিন। আজ ঘুরে দাঁড়ানোর জন্মদিন। আজ স্পর্ধার জন্মদিন। আজ একটা অনন্ত প্রত্যয় বোধের জন্মদিন। আজ বেঁচে থাকার জন্মদিন। জন্মদিন ভালোবাসার!
আজ ফসিলস এর জন্মদিন
অ্যলান দা, দীপ দা, চন্দ্রমৌলী দা, তন্ময়দা, পম দা এবং রূপমদা- সকল ফসিলসের জন্মদাতাদের জন্য রইল এক দীর্ঘ ২২ বছরের লড়াইয়ের শুভেচ্ছা অভিনন্দন আর ভালোবাসা।
সাথে সকল ফসিলস প্রেমীদের জন্য রইল নিরন্তর ভালোবাসা। রইল রূপম ইসলাম। রইল ফ সি ল স।
২২ বছরের এই লড়াই, যেন ২২ কোটি বছর ধরে প্রতিটি মানুষের ভালোবাসা, প্রত্যয়, প্রতিবাদের ভাষা হয়।
যাবতীয় দুঃখ, নিরাশা আর ব্যর্থতার গ্লানি মুছে নিয়ে যেন সেই পুরাতন ভঙ্গীতে বলে উঠতে পারি, উচ্চারণ করবো সেই রক্ মন্ত্র-
“জয় রক্। জয় ফসিলস”
আর শতাব্দীশেষে এসে কোনো অনাগত নব্য প্রজন্ম, যেন সোচ্চার কন্ঠে বলতে পারে-
“এই প্রত্যয় তোমাদের হোক,
আগামীর হোক।
আগামীর হোক।”
কোনো ঐশ্বরিক মোহ নয়, ক্ষণিকের সন্মোহন নয়,
কোন নিজস্ব জাদুবলে যে এই ব্যান্ডটি হাজার হাজার জীবনবিমুখ মানুষকে জীবনমুখী করে তুলেছেন, নিজের ওপর আস্থা ফিরিয়েছেন- সেসব নাহয় প্রবল একটা আশ্চর্য বোধ হয়েই থাকুক।
আসুন, আমরা বরং গাই-
“মহাপ্রলয়ে উড়িয়ে দেবো,
যত বিস্ফোরণের শুকনো ছাই,
আমি ব্রহ্মাণ্ডের প্রতিটি ধূলোয়,
লিখে দেবো শুধু তোমাকে চাই”।
কলমে: পল্লব