সমাজ সংস্কারে রাজা রামমোহন রায়ের ভূমিকা বা অবদান (PDF)
সমাজ সংস্কারে রাজা রামমোহন রায়ের ভূমিকা, সমাজ সংস্কার আন্দোলনে রাজা রামমোহন রায়ের অবদান [রাজা রামমোহন রায়ের সমাজ সংস্কার আলোচনা কর, রাজা রামমোহন রায় সমাজ সংস্কারক] (Social Reform Movement Raja Ram Mohan Roy, Social Reformer Raja Ram Mohan Roy In Bengali)

আধুনিক ভারতে যেসব সংস্কারক জন্মগ্রহণ করেছেন তাদের মধ্যে সবচেয়ে অগ্রগণ্য ছিলেন রাজা রামমােহন রায়। রামমােহন ভারতীয় সমাজের অন্ধকার ও কুসংস্কার দূর করে জাতিকে আলাের পথ দেখান। তাঁকে ‘ভারতের প্রথম আধুনিক মানুষ’, ‘আধুনিক ভারতের জনক’, ‘আধুনিক ভারতের ইরাসমাস’ প্রভৃতি অভিধায় ভূষিত করা হয়। তিনি ছিলেন ‘ভারতীয় নবজাগরণের অগ্রদূত’। মােগল সম্রাট দ্বিতীয় আকবর তাঁকে ‘রাজা’ উপাধি দেন।
রাজা রামমোহন রায়ের সমাজ সংস্কার
জাতিভেদ প্রথার বিরােধিতা
রামমােহন হিন্দু সমাজে জাতিভেদ ও অস্পৃশ্যতা প্রথার তীব্র বিরােধিতা করেন। তিনি ‘বজ্রসুচি’ গ্রন্থটির বাংলা অনুবাদ করে প্রচার করেন যে, জাতিভেদ প্রথা শাস্ত্রসম্মত নয়। তিনি অসবর্ণ বিবাহের সমর্থনে বিভিন্ন পুস্তিকা রচনা করেন।
সতীদাহ প্রথা নিবারণ
তৎকালীন হিন্দু সমাজে উচ্চবর্ণের মধ্যে মৃত স্বামীর চিতায় তার জীবিত স্ত্রীকে পুড়িয়ে মারা হত। এই অমানবিক কুপ্রথা ‘সতীদাহ প্রথা’ নামে পরিচিত। এই কুপ্রথার বিরোধিতা করে রামমােহন জনমত গড়ার উদ্দেশ্যে প্রচারকার্য চালান। তিনি বড়োলাট লর্ড উইলিয়াম বেন্টিঙ্কের কাছে ৩০০জন বিশিষ্ট নাগরিকের স্বাক্ষর সংবলিত একটি আবেদনপত্র জমা দিয়ে এই প্রথা বন্ধের দাবি জানান। তার আবেদনে সাড়া দিয়ে বেন্টিঙ্ক ১৮২৯ খ্রিস্টাব্দে (৪ ডিসেম্বর) ১৭নং রেগুলেশন জারি করে সতীদাহপ্রথাকে বেআইনি এবং শাস্তিযােগ্য অপরাধ বলে ঘােষণা করেন।
নারীকল্যাণ
রামমােহন নারীদের মর্যাদা প্রতিষ্ঠায় বিভিন্ন উদ্যোগ নেন।
- তিনি বিভিন্ন শাস্ত্র থেকে উদ্ধতি দিয়ে প্রমাণ করেন যে, পিতা বা স্বামীর সম্পত্তিতে নারীর অধিকার আছে।
- তিনি স্ত্রীশিক্ষার প্রসারে বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করেন।
- কৌলীন্যপ্রথার অভিশাপ থেকে নারীসমাজকে রক্ষার উদ্দেশ্যে তিনি প্রয়াস চালান।
- নারীর বিবাহ বিষয়ক সুনির্দিষ্ট আইন প্রণয়নের উদ্দেশ্যে তিনি প্রয়াস চালান।
অন্যান্য সামাজিক সংস্কার
রামমােহন বাল্যবিবাহ, বহুবিবাহ, কন্যাপণ, কৌলীন্যপ্রথা, গঙ্গাসাগরে সন্তান বিসর্জন প্রভৃতি কুপ্রথাগুলির বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ জানান। রামমােহন নারীপুরুষের সমানাধিকার প্রতিষ্ঠা, বিধবাবিবাহের প্রচলন প্রভৃতি বিষয়ে যথেষ্ট তৎপর হন।
উপসংহার
রামমােহন রায়ের চরিত্রে কিছু সীমাবদ্ধতাও লক্ষ করা যায়। তার বিরুদ্ধে অভিযােগ করা হয় যে, তিনি জাতিভেদপ্রথা বা বহুবিবাহের বিরুদ্ধে তীব্রভাবে রুখে দাঁড়াননি। ব্রিটিশ সংস্কৃতির প্রতি অত্যন্ত অনুরাগের বশে তিনি দেশীয় শিক্ষার প্রতি অবহেলা প্রকাশ করেছেন। কিন্তু এসব সমালােচনা সত্ত্বেও আধুনিক ভারত গঠনে তার অবদান অসীম।
আরো পড়ুন – সমাজ সংস্কারে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের ভূমিকা বা অবদান
আরো লাগবে
খুব সুন্দর লিখেছেন thankyou