Bangla Golpo ‘হৃদমাঝারে’ Bengali Story 2022

বাংলা গল্প লেখা, বাংলা ছোট ও বড় গল্প পিডিএফ ২০২২ [Bangla Golpo 2022, Bengali Story] (Notun Bangla Golpo PDF, Short & Long Stories In Bengali)

গল্প | হৃদমাঝারে |
লেখক | মাহফুজা আফরিন শিখা |
সদ্যজন্ম নেওয়া এই আমি ছিলাম পরিবারের সকলের কাছে অপয়া অলক্ষ্যি রাক্ষসী। কারন আমার জন্মের কয়েক ঘন্টা পরই আমার শস্যাশয়ী নানা মারা যান। বাবা আমার মুখ পর্যন্ত দেখেননি। কারন আমি মেয়ে হয়েছিলাম তাই। তার চার দিন পর যখন আমাকে হসপিটাল থেকে বাড়ি নিয়ে আসে সেদিন আমার দাদি মারা যান। সেদিন থেকেই আমি আমার বাবা মায়ের চক্ষুশূল হয়ে উঠি। বাবা মা কেউই আমাকে তাদের কাছে রাখতে চাইছিলো না। তারা চেয়েছিলো কোন অনাথ আশ্রমে আমাকে পাঠিয়ে দিতে কিন্তু তখনই আমার নানি যাকে আমি নানুভাই বলে ডাকি সে তার স্বামির মৃত্যুর শোক ভুলে আমাকে তার কোলে তুলে নেয়। তারপর থেকে আমি আমার মামার বাড়িতেই বড় হয়ে উঠি। বাবা মা আমার খরচ বহন করতো না,এমনকি আমি জানতামই না কে আমার বাবা মা। বড় হওয়ার সাথে সাথে আমি আমার বাবা মায়ের পরিচয় জানতে পারি। তখনো তারা আমাকে তাদের কাছে টেনে নেয়নি। কোন দিনও পাইনি আমি আমার বাবা মায়ের ভালোবাসা। নানুভাইয়ের কথায় তারা শুধু তাদের সন্তান হিসাবে আমার পরিচয়টাই বহন করেছে।
চোখের কোটর থেকে দুফোটা নোনাজল বেয়ে পড়লো মুনের। ছয় বছর পর দেশের মাটিতে পা রাখছে সে। একদিন প্রিয় মানুষগুলোর থেকে পাওয়া আঘাত সহ্য করতে না পেরে অভিমানে সে চলে যায় দেশের বাহিরে। মুন আজ একজন ডাক্তার। ডক্টর মেহরিমা খান। ডাকনাম মুন। সদ্য এমবিবিএস পাশ করে দেশে ফিরছে সে। চোখের জল মুছে হাত ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখতে পেল আধ ঘন্টা হয়েগেছে সে দেশের মাটিতে পা রেখেছে অথচ অর্ণা এখনো আসছে না। ছয় বছর আগের মুন হলে সে নিজেই একটা গাড়ি নিয়ে বাড়ি চলে যেতো। কিন্তু আজকের মুন সে খুব চুপচাপ। কোন ঝামেলায় পরতে চায়না সে। তাই সে অপেক্ষা করতে লাগলো কখন অর্ণা আসবে।
সেনানিবাসের ভিতরে কমিশনড অফিসার ও নন কমিশনড অফিসার দুজনে কথা বলছেন।
গতকাল রাতে স্বরাষ্ট্র মুন্ত্রি নিজে আমাকে কল করে ওই কেস নিয়ে কথা বলেছেন। স্বরাষ্ট্র মুন্ত্রি ও স্বাস্থ্যমূন্ত্রি দুজনের মাঝে এ নিয়ে কথা হয়েছে। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব তারা এই কেসের সমাধান চান। আমি আপনাকে বলেছিলাম বিশ্বস্ত কোন অফিসার আছে কিনা? যাকে চোখ বন্ধকরে ভরসা করে এই কেসের দায়িত্ব দেওয়া যায়। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব তারা এর সমাধান চান।
Bangla Golpo
স্যার, আমি কথা বলেছি ক্যাপ্টেন ফারহান সাদিকের সাথে।বয়স কম হলে ছেলেটার দম আছে। দুই বছরের ক্যারিয়ারে সে যে কেইসটা হাতে নিয়েছে সেটাতেই সাকসেস হয়েছে। অল্প সময়ের মধ্যে ডিপার্টমেন্টে তার নাম ছড়িয়ে আছে।শুনেছি ছেলেটার নিজের ব্রাঞ্চ আছে। তার বিশ্বস্ত লোকদের নিয়ে সে একটা ব্রাঞ্চ অপেন করেছে। যেটা ক্রাইম ব্রাঞ্চ নামে পরিচিত। তাছাড়া ফারহান দুদকের একজন স্পেশাল অফিসার। একটা কেসের কাজে সে কক্সবাজার গিয়েছিলো। আজই সে কক্সবাজার থেকে ফিরছে। তারপর আমাদের এই কেইসটা হাতে নিবে। আপনি নিশ্চিত থাকতে পারেন স্যার।
তাকে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব আমার সাথে দেখা করতে বলো। চার বছর আগের ঘটনা আবার পুনরাবৃত্তি হবে। তবে এইবার এই খেলা শেষ দেখে ছাড়বো।
জ্বি স্যার। আচ্ছা স্যার আমরা ছাড়া কি আরো কেউ জানে এই কেসের বিষয়ে?
আরো দুজন জানে।
তারা কে কে স্যার?
সময় হয়ে সবটা জানতে পারবে।
ওকে স্যার।
বাম হাতের ভাজে কোট আর ডান হাতে ট্রলি ব্যাগ নিয়ে হেটে মেইন রাস্তার দিকে আগ্রসর হচ্ছে ক্যাপ্টেন ফারহান সাদিক। এয়ারপোর্ট এসে নেমেছে প্রায় আধঘণ্টা হলো। অথচ তার ভাই তাকে এক একঘন্টা আগে কল করে বলেছে সে তাকে রিসিভ করার জন্যে রওনা দিয়েছে। বেশ রাগ হচ্ছে ফারহানের। ফারহান সময়ানুবর্তী। সময়ের কাজ সময়েই হওয়া চাই তার। আর তাকেই কিনা এখানে বিনা কারনে আধঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকতে হচ্ছে। আশেপাশের মেয়েগুলা হা করে তার দিকে তাকিয়ে থাকে। আর থাকবেই না কেন? এমন লম্বা সুঠাম দেহের অধিকারী ছেলে আজকাল পাওয়া মুশকিল। বুক পকেটে তাকা সানগ্লাসটা চোখে পরে বিরক্ত সহিত হাটছে ফারহান। এমন সময় কয়েকটা মেয়ে এসে ভীড় জমালো তার সামনে। ফারহান সানগ্লাসটা খুলে সেটা আবার তার বুকে গুজে দিলো। ভ্রু কুচকে কপালে কিঞ্চিৎ ভাজ ফেলে মেয়েগুলার দিকে তাকাতেই তাদের মধ্যে একজন বলে উঠলো,
স্যার, আপনি ক্রাইম ব্রাঞ্চের প্রতিষ্ঠাতা ও দুদকের স্পেশাল অফিসার ক্যাপ্টেন ফারহান সাদিক রাইট! আমি আপনার অনেক বড় ফ্যান। নিউজ চ্যানেলে আপনাকে যতবার দেখেছি ততবারই আপনার উপর ক্রাশ খেয়েছি।
কথাগুলো বলেই মেয়েটা ফারহানের দিকে হাত বাড়িয়ে দিলো। ফারহান মেয়েটার দিকে বিরক্তি দৃষ্টি নিক্ষেপ করে কিছু বলবে তখনি পাশ থেকে পুরুশনালী একটা কন্ঠশ্বর ভেসে আছে,
আসলে হয়েছে কি! স্যারের রুমটা না অনেক ছোট তাই এত বড় ফ্যান স্যার নিতে পারবে না। তাছাড়া স্যাররে রুমে এসিও আছে তাই ফ্যানের কোন প্রয়োজন হবে না। তবে আমার রুমটা না অনেক বড় সাথে মনটাও। ফেন্ডস্। কথাটা বলেই ছেলেটা মেয়েটার দিকে হাত বাড়িয়ে দিলো। এটা দেখে ফারহান ঠোট চেপে হাসছে আর মেয়েটা থতমত খেয়ে বলে,
আমার না মাথাটা ঘুরছে। আমি আসছি। বলেই মেয়েটা চলে যায়। সাথে অন্য মেয়েগুলাও। মেয়েগুলা চলে যাওয়ার পর ছেলেটা বলে,
হ্যালো স্যার, কেমন আছেন?
বাঁচালে আমায়, পলাশ। বড় করে শ্বাস ত্যাগ করে ফারহান। তখন পাশ থেকে আরেকটা ছেলে এসে ফারহানকে জড়িয়ে ধরে বলল,
কেমন আছিস ভাই?
ফারহান ছেলেটাকে ছাড়িয়ে কড়া গলায় বলে উঠলো,
এক ঘন্টা আগে বাসা থেকে বের হয়েও এয়ারপোর্ট পৌঁছাতে এত লেট।
আসতে দেরী হয়নি তো। ভেতরে আসতে দেরী করেছি ভাই।
কি এমন রাজকার্য করছিলি বাহিরে শুনি।
একটা পরী দেখছিলাম। ডানাকাটা পরী। মন খারাপ করে বলল ছেলেটা, কিন্তু জানিস ভাই বেশী স্মার্ট সাজতে গিয়ে তার সাথে ঝগড়া করে এলাম। ধূর ভাল্লাগেলা।
ফারহান ছেলেটার কথা ইগনোর করে বলল,
গাড়ির চাবিটা?
পলাশ ফারহানের হাতে গাড়ির চাবি দিতেই ফারহান তার ব্যাগটা গাড়ির ডিকিতে রেখে ড্রাইভিং সিটে গিয়ে বসে। তারপর ছেলেটা মন খারাপ করে তার পাশের সিটে বসে। আর পলাশ বসে পিছনে।
পলাশকে তার বাসার সামনে নামিয়ে দিয়ে ফারহান তার ভাইকে নিয়ে বাসায় চলে যায়।
ফারহান বাসায় ফিরতেই বাড়িতে চাঁদেরহাট বসে। কিন্তু খুশি হয়নি ফারহানে মা আমেনা বেগম। এটা দেখে ফারহানের বাবা ফয়সাল সাদিক বলে বলেন,
ছেলে বাড়ি এসেছে তুমি খুশি হওনি গিন্নী। এমন মন মরা হয়ে বসে আছো কেন?
বাংলা গল্প
আমেনা বেগম গালে হাত দিয়ে বসে ফারহানের দিকে তাকিয়ে ছিলো। ফয়সাল সাদিকের কথা শুনে তিনি গাল থেকে হাত সড়িয়ে নিয়ে বড় করে শ্বাস নেন। অতঃপর বলেন,
ইন্ডিয়ান সিরিয়ালে দেখি ছেলে কাজের জন্যে বাড়ির বাহিরে যায় আর আসার সময় সাথে একটা বউ নিয়ে বাড়ি ফিরে। আমার বোধহয় এ জমনে আর পুত্রবধূর মুখ দর্শন করা হবে না। আহা কপাল আমার। কপলা চাপড়ান আমেনা বেগম। কপাল করে একটা ছেলের জন্ম দিয়েছিলাম আমি।
ফারহান ড্রয়িংরুমের বসে সবার সাথে কথা বলছিলো, আমেনা বেগমের কথা কানে আসতেই সে তার মায়ের দিকে তাকিয়ে গলার স্বর কিছুটা কঠিন করে বলে উঠলো,
তোমাকে কতকরে বলেছি ইন্ডিয়ান সিরিয়ালগুলা দেখবেনা। সিরিয়াল দেখতে দেখতে নিজেকে সিরিয়ালের ক্যারেক্টার ভাবা শুরু করে দিয়েছো। কত করে বলেছি আমি বিয়ে করবো না। তবুও কেন তোমরা আমার পিছনে পরে আছো। রওনাক আছেই ওকে বিয়ে দিয়ে ঘরে তোমার বৌ-মা নিয়ে আসো।
কথাগুলো বলেই রাগে ঘটঘট করতে করতে উপরে নিজের রুমে চলে গেল ফারহান। রওনাক এসে আমেনা বেগমের সামনে দাঁড়িয়ে বলে উঠলো,
ছোট মামার মৃত্যুটা মেনে নিতে পারেনি ফারহান। আসলে ও তো ছোট মামাকে অনেক ভালোবাসতো তাই হয়তো তার মৃত্যুটা ফারহানের উপর এমন প্রভাব ফেলছে। মন খারাপ করো না মামি। দেখবে সব ঠিক হয়ে যাবে। রওনাক চলে যায় ফারহানের রুমে। ফারহান চেঞ্জ করে মাত্র ওয়াশরুম থেকে ফিরছে। পরনে শুধু মাত্র একটা টাওজার। হাতে তাকা টাওয়ালটা বিছানার এক পাশে রেখে রওনাকের দিকে তাকিয়ে বলল,
কিছু বলবি!
কাল তুই আমাদের সাথে যাচ্ছিস তো? দেখ না করবি না।
ওকে ওকে ব্রো, যাবো আমি। স্মিত হাসে ফারহান।
রওনাক ফারহানকে জড়িয়ে ধরে রুম থেকে বের হয়ে যায়। ফারহান একটা টিশার্ট পরে পলাশকে কল করে। নতুন কেইস নিয়ে কথা হচ্ছে দুজনের মাঝে। এর মাঝে ফারহান বলে উঠে কাল রাওনাকের জন্যে মেয়ে দেখতে যাবে সেই কথা। তখন পলাশ প্রশ্ন করে,
স্যার আপনি বিয়ে করবেন না?
না।
কখনোই না?
মনের মতো মেয়ে পেলে অবশ্যই বিয়ে করবো।
আপনার কেমন মেয়ে পছন্দ স্যার।
যেহেতু আমি সুন্দর তাই আমার বউকে অবশ্যই সুন্দরী হতে হবে। স্মার্ট হবে। যেহেতু এখন আধুনিক যুগ তাই সে ড্রিংক করতেই পারে। তবে সেটা শালিনতা বজায় রেখে। প্রয়োজনে দুজনে বসে সিগারেটের আড্ডা দিবো। একে অপরের ছায়া হয়ে থাকবো। তার চোখে আমি নিজেকে দেখতে চাই।
স্যার আমার সাথে একটু বায়োলজিক্যাল ল্যাবে যাবেন?
কেন? সেখানে আবার তোমার কি প্রয়োজন?
না মানে সেখানে অর্ডার করে আপনার জন্যে এমন গুণবতী একটা মেয়ের বানাতাম। আপনার যে ছোট চাহিদা এমন মেয়ে পাবে বলে তো আমার মনে হয়না। তাই আরকি!
পলাশ। ধমক দিয়ে উঠে ফারহান। তারপর মনে মনে বলে, পাবো, নিশ্চয় পাবো। আর এমন মেয়ে একজনই হতে পারে।
পরেরদিন বিকালে শিকদার ফয়সাল সাদিকের পুরো পরিবার আসে অর্ণাদের বাসায়। রওনাক ফারহানের ফুবাতো ভাই। স্বামির মৃত্যর পর রওনাকে মা তার বাপের বাড়িতেই থাকেন। রওনাক আর ফারহান দুই ভাই হলেও তারা বেস্ট ফ্রেন্ড। রওনাকে জন্যে তারা অর্ণাকে দেখতে আসছে। তারা আসতেই লাভলী বেগম তাদের ড্রয়িংরুমে বসিয়ে সমাদর করতে ব্যাস্ত। এদিকে মুন অর্ণাকে সাজিয়ে তার নানুভাইয়ের সাথে পাত্রপক্ষের সামনে পাঠিয়ে দেয়। আর মুন সে তার রুমের বসে থাকে। অর্ণাকে দেকে তাদের পছন্দ হয়েছে। বিয়ের পাকা কথা চলছে এমন সময় আনোয়ার সাহেব মানে অর্ণার বাবা বলে উঠলেন,
সবাই এখানে উপস্থিত কিন্তু মুনকে তো দেখতে পাচ্ছি না। মুন কোথায়? ডাকো ওকে!
Bengali Story 2022
লাভলী বেগম চলে গেলেন মুনকে ডাকতে। কিছুক্ষণ পর তিনি মুন সমেত চলে আসেন। শিড়ি দিয়ে নামতেই মুনকে দেখে অবাক ফারহান। কখন যে বসা থেকে দাঁড়িয়ে গেছে সে খেয়ালই নেই তার। সবচেয়ে বেশী অবাক হয়েছিল মুনের ড্রেসআপ দেখে। জিন্স প্যান্টের সাথে একটা গোলাপি কুরতি। মাথার চুলগুলো ছেড়ে একপাশে ক্লিপ দিয়ে আটকে রেখেছে। চোখে হালকা কাজলে বেশ লাগছে মুনকে। যে মেয়ে ওয়েস্টার্ন ড্রেস ছাড়া অন্য কোন ড্রেস পরতো না সে কিনা কুর্তি পরেছে। শিঁড়ি দিয়ে নিচে নিমে এলো মুন। আর তখনি শুনতে পেলে এক অতিপরিচিত কন্ঠশ্বর। যেটা শুনে জমে যায় মুনের পা।
মেহরিমা। মেহরিমা খান এখানে?
সামনে তাকাতেই ফারহানকে দেখে চোখ বড় বড় হয়ে যায় মুনের। শীতল কন্ঠে ফারহানের দিকে তাকিয়ে থাকে সে। এদিকে ফারহান রাগে হাত মুষ্টিবদ্ধ করে নিয়েছে। হাতের শিড়া ফুলে উঠেছে তার। উপস্থিত সকলে ফারহানের দিকে প্রশ্ন সূচক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। রওনাকে বলে উঠলো,
তোরা কি একে অপরকে চিনিস।
ফারহান রওনাকের কথার কোন জবাব না দিয়ে বলল,
এই বিয়ে হবে না। বাবা তোমার আগেই মেয়ের বাড়ির খোঁজ খবর নেওয়া উচিৎ ছিলো। শুধু মাত্র মেয়ে পছন্দ হয়েছে বলেই তাকে বাড়ির বউ করে নেওয়া যায় না। তার আশেপাশের মানুষগুলো দেখতে হয় জানতে হয়। এই রকম চরিত্রহীন মেয়ে যে বাড়িতে আছে সে বাড়িতে আমার ভাইয়ের বিয়ে হবে না।
আনোয়ার সাহেব মুনকে জিগ্যেস করলেন,
এসব কি কথা শুনছি মুন?
মুন অশ্রুসিক্ত নয়নে ফারহানের দিকে এক পলক তাকিয়ে মাথা নিচু করে বলল,
কেউ যদি আমার সম্পর্কে খারাপ কিছু ভেবে থাকে তাহলে আমার কি করার আছে। আমি তো তার ভাবনা বদলাতে পারবো না।
তোমার থেকে এর চেয়ে ভালো এ্যানসার আশা করা ভুল। জিবনেও শুধরাবে না তুমি। চরিত্রহীন অসভ্য মেয়ে একটা।
কথাগুলো বলেই ফারহান ঘটঘট করতে করতে চলে যায়। মুন নিঃপলক তাকিয়ে থাকে ফারহানের চলে যাওয়ার দিকে।
সূর্যিমামা পশ্চিম আকাশে ঢলে পড়েছে। চারদিকে লাল আভা ছড়িয়ে আছে। ধূসর কালো ছায়া নেমে আসছে পৃথিবীর বুকে। প্রকৃতি জানান দিচ্ছে সন্ধা নেমে আসছে। বেলকনিতে বসে চোখ বন্ধকরে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে মুন। চোখদুটো ভিষন জ্বালা করছে। ফারহানের বলা কথাগুলো বারবার কানের কাছে ভেজে উঠছে। মুন মনে মনে বলে উঠলো,
তুমি এই শহরের ছেলে সেটা জানতাম কিন্তু তাইবলে এতটা কাছে থাকবে সেটা জানতাম না। পৃথীবি গোল এটা জানতাম তাই বলে ঘুরেফিরে আবার তোমার সম্মুখীন হতে হলো। আমি তো ভেবেছিলাম আর কোন দিন তোমার সাথে দেখা হবে না ফারহান। ফারহান আর মেহরিমার কোন দিন দেখা হবে না। কিন্তু এটা কি হয়ে গেলো। এতগুলা বছর পর আবার কেন তোমার সম্মুখীন হতে হলো আমাকে। বিশ্বাস করো ফারহান যদি জানতাম দেশে ফিরে তোমার সম্মুখীন হতে হবে তাহলে আমি কখনোই দেশে ফিরতাম না।
বাংলা গল্প লেখা
চোখ মেলে তাকায় মুন। আকাশের দিকে তাকিয়ে বড় করে শ্বাস নেয়। তখনি ওর মোবাইলের রিংটোন বেজে উঠে। স্কিনে ভেসে থাকা নামটা দেখে পরপর কয়েকবার শ্বাস নিয়ে গলার ভয়েজ ঠিক করে নিয়ে কল রিসিভ করে সে। ফোনের ওপাশ থেকে বলে উঠলো,
তাহলে কাল থেকে নার্সিংহোমে জয়েন করছো।
জ্বি আংকেল। আমি জয়েনিং লেটার পেয়ে গেছি। কাল থেকেই জয়েন করবো।
সাবধানে থেকো মা।
জ্বি আংকেল। তারপর আরো কিছুক্ষণ কথা বলার পর কল রেখে আবারো চোখ বন্ধকরে বসে থাকে মুন। আর তখনি ওর কাছে আসে অর্ণা আর ওর নানুভাই। অর্ণা এসে মুনের কাঁধে হাত রাখতেই চোখ মেলে তাকায় সে। নানুভাই প্রশ্ন করে,
এই কি সেই ফারহান! যার কারনে তুই,,,,,
হ্যাঁ। এই সেই ফারহান। মুন অর্ণার গালে হাত রেখে বলে, আমার কারনে তোর বিয়ে ভেঙেছে তো তাহলে আমিই সব ঠিক করে দিবো। কথা বলবো আমি ফারহানের সাথে।
তার কোন দরকার নেই মুন। যে বা যারা আমার মুনের নামে মন্দ কথা বলে যেখানে তোর কোন সম্মান নেই সেই বাড়িতে আমি বিয়ে করবো না। মুন তুই আমার খালাতো বোন হলেও তোকে আমি আমার নিজের ছোট বোন মানি। তুই তো আমার সোনা বোন রে মুন। তোর অস্মান আমি কি করে মেনে নেই বলতো।
ফারহান তো ভুল কিছু বলে নি। ও যেটা দেখেছে সেটাই বলেছে। সত্যিই তো আমি,,,
চুপ, একদম চুপ।
মুনকে থামিয়ে বলে অর্ণা। তুই কেমন সেটা আমরা সবাই জানি। মুন মৃদু হেসে অর্ণার দিকে তাকিয়ে বলে, আমি কথা বলবো ফারহানের সাথে। তখন মুনের নানুভাই বলে উঠে,
কথা বলে দেখ কি হয়। তুই তো ওকে ভালো চিনিস।
নানুভাইয়ের কথা শুনে স্মিত হাসে মুন। তারপর তীক্ষ্ণ কন্ঠে বলে,
চিনতে আর পারলাম কই নানুভাই। সেই তো নতুন প্রেমের অনুভূতি তারপর প্রেম শুরু হওয়ার আগেই শেষ হয়ে গেলো।
দীর্ঘশ্বাস ফেলে মুন। তারপর ওদের সকলের সাথে নিচে চলে যায়।
এদিকে অফিসে বসে পেপার ওয়েটটা হাতে নিয়ে সেটা পর্যবেক্ষন করছে আর মিটমিট করে হাসছে ফারহান। ওর থেকে কিছুটা দুরত্ব বজায় রেখে দাঁড়িয়ে আছে পলাশ। সে ফারহানে এমন রহস্যজনক হাসির কারন খুঁজায় ব্যাস্ত। তীক্ষ্ণ চাহনি নিক্ষেপ করে সে ফারহানের দিকে। মনে মনে বলে,
স্যার এভাবে হাসছে কেন? রহসের গন্ধ পাচ্ছি। মনে হচ্ছে রহস্যটা ভিতর থেকে আসছে। পলাশ নাকটা খোলা রাখ।
ফারহান পেপার ওয়েটটা রেখে মোবাইল হাতে নিয়ে রহস্যময় হাসি দিলো। হাতে থাকা মোবাইলটা এপিট ওপিঠ ঘুড়িয়ে বিড়বিড় করে বলে উঠলো,
ডঃ মেহরিমা খান তোমাকে তো আমার কাছে আসতেই হবে। আমি জানি তুমি কল করবে। আমিও যে তোমার কলের অপেক্ষাতেই আছি। তোমাকে তো এত সহজে ছাড়বো না আমি।
নিজের মনে কথাগুলো বলছিলো ফারহান। আর তখনি ওর মোবাইলের রিংটোন বেজে উঠে। স্কিনে ভেসে থাকা আননোন নাম্বার দেখে পৈশাচিক হাসি হাসে ফারহান। তারপর কল রিসিভ করে কানের কাছে ধরতেই ওপাশ থেকে আওয়াজ আসে,
ক্যাপ্টেন ফারহান সাদিক বলছেন?
ডঃ মেহরিমা খান। আমি জানতাম তুমি কল করবে কিন্তু সেটা এত তাড়াতাড়ি সেটা জানতাম না। তা বলো কি জন্যে কল করেছো।
বিকাল ঠিক চারটায় সামনের ওই তিন রাস্তার মোরে আমি অপেক্ষা করবো। আপনি আসবেন।
এই শুনো তুমি কি আমাকে অর্ডার করছো। ভুলে যেওনা তুমি কার সাথে কথা বলছো। আমি যাবো না।
ফারহানের গলার স্বর কিছুটা মোটা। এতে ওপাশে থাকা লোকটার ভ্রুক্ষেপ হলো না। সে বলে উঠলো,
আমি শুধু টাইমটা জানিয়ে রাখলাম।
এই শোন ডন্ট ট্রাই টু বি ওভার স্মার্ট।
ও আমার জন্ম থেকেই ছিলো। আপনি আসবেন কি আসবেনা সেটা সম্পূর্ণ আপনার ইচ্ছে। আমি অপেক্ষা করবো। কথাগুলো বলেই কল কেটে দেয় মুন। ফারহান কিছু বলতে চেয়েও বলতে পারে না। রাগে মোবাইলটা টেবিলের উপর ছুড়ে মারে। বড় বড় করে কয়েকবার শ্বাস নিয়ে উঠে দাঁড়ায় সে। রাগে ফুসছে আর কেবিনের ভিতরে পাইচারি করছে। কি ভাবেটাকি নিকেজে। আমার মুখের উপর কল কেটে দিলো। ছাড়বো না আমি তোমাকে ডঃ মেহরিমা খান ওরফে মুন।
দূর থেকে ফারহানের এই ছটফটানি লক্ষ করছে পলাশ। সে এতক্ষণ ভ্রু কুচকে কপালে চিন্তার কয়েকটা ভাজ ফেলে তাকিয়ে ছিলো ফারহানের দিকে। এবার সে নিজেকে আর দমিয়ে রাখতে না পেরে ফারহানের কেবিনে ডুকে পরে।
Stories In Bengali
স্যার কেসটা কি?
ওটা তুমি বুঝবে না। যাও নিজের কাজ করো।
আচ্ছা স্যার এই মেহরিমাটা কে? কই আগে তো এর নাম শুনিনি। গার্লফেন্ড নাকি?
পলাশের কথা শুনে হচকচিয়ে উঠে ফারহান। শীতল দৃষ্টিতে পলাশের দিকে তাকালেও পরক্ষনে তার দৃষ্টি কঠিন হয়ে উঠে। পলাশ। ধকম দিয়ে উঠে ফারহান। তুমি ভুলে যাচ্ছো আমি তোমার সিনিয়র।
তাতে কি স্যার, আমি তো আপনার ভাইয়ের মতো তাইনা স্যার। স্যার একটা প্রশ্ন করি,
হুম বলো।ফারহান তার মাথায় হাত রেখে চেয়ারে বসে পরে। ও জানে পলাশ এখন বকবক শুরু করবে। তবে তার এই প্রশ্নের ভান্ডার কখন শেষ হবে সেটা জানা নেই তার।
পলাশ নিজেই বকবক করে যাচ্ছে আর ফারহান পুরনো কিছু ফাইল দেখছে। কথা বলার মাঝে পলাশ ডাকলে ফারহান ফাইলে মাথা রেখে শুধু বলে যাচ্ছে তুমি বলো আমি শুনছি।
চারটা বাজার কয়েক মিনিট আগে ফারহান অফিস থেকে বেড়িয়ে পড়লো। পলাশ সাথে আসতে চাইলে ওকে বারণ করে ফারহান। পলাশ হা করে তাকিয়ে থাকে ফারহানের দিকে। এটা কোন ফারহান? একবছর ধরে সে ফারহানের সাথে কাজ করছে। ফারহানের সব কাজের সঙ্গী পলাশ, আর আজ ফারহান পলাশকে তার সাথে নিচ্ছে না। ফারহান বেড়িয়ে গেলে পলাশ গালে হাত দিয়ে বসে মনে মনে বলে,
মনে হচ্ছে রহস্যটা বেশ গভীর। পলাশ নাক কান চোখ সবটাই খোলা রাখতে হবে তোকে। বাই দ্যা ওয়ে মেয়েটা কে?
গন্তব্যে পৌঁছাতেই ফারহান দেখতে পেলো মুন একটা ছেলের সাথে মুখোমুখি দাঁড়িয়ে কথা বলছে। ফারহান গাড়ি থেকে নেমে ওদের কাছে আসতেই ছেলেটা চলে যায়। মুন তার হাত ঘড়ির দিকে তাকিয়ে আবার সামনে তাকায়। আর তখনি তার চোখ আটকে যায় ফারহানের উপর। ইউনিফর্ম পড়ে বেশ স্মার্ট লাগছে ওকে। কয়েক সেকেন্ডের জন্যে হলেও মুন স্তব্ধ হয়ে যায়। পরক্ষনে নিজেকে সামলে নিয়ে অন্যদিকে ঘুরে তাকায়। ফারহান তার হাত দুটো বুকের উপর ভাজ করে মুনের দিকে তাকিয়ে তাচ্ছিল্যের হাসি হাসলো অতঃপর বলল,
ছেলেটা কে ছিলো? নিউ বয়ফেন্ড।
আমি কাউকে কইফিয়ত দিতে বাদ্য নই।
এই তুমি সোজাসাপ্টা কথা বলতে পারো না। তা কি এমন দরকার পড়লো হুম। ডঃ মেহরিমা খান নিজে আমাকে ডাকলো।
ফারহানের চোখ-মুখে বেশ কৌতুহল। মুন ফারহানের দিকে একপলক তাকিয়ে মাথা নিচু করে নিলো। পরপর কয়েকবার শ্বাস ফেলে বলতে শুরু করলো,
আমাদের মাঝে যা হয়েছে তার জন্যে অর্ণা আর আপনার ভাইয়ের বিয়ে বন্ধ করাটা কি খুব জরুরি। মানছি আমি খারাপ খুব খারাপ। কিন্তু অর্ণা, ও সত্যিই অনেক ভালো। আমার ভুলের জন্যে আপনি পরিবারের এতগুলা মানুষের সিদ্ধান্ত নাকচ করতে পারেন না।
কি বলতে চাইছো তুমি?
আপনি এই বিয়েটা ভেঙে দিবেন না। প্রথমবার কোন ছেলেকে অর্ণার পছন্দ হয়েছে। হ্যা মানছি এটা এরেঞ্জ মেরেঞ্জ ছিলো। অর্ণা কোন দিনও সং সেজে পাত্র পক্ষের সামনে বসতে চাইতো না। আর বিয়েতো দূরের কথা। ও বিয়েতে রাজি হয়েছে কারন রওনাককে দেখে ওর পছন্দ হয়েছে তাই। তাছাড়া পরিবারের সকলে যেখানে রাজি সেখানে আপনার আর সমস্যার জন্যে এই বিয়েটা ভাঙা ঠিক হবে না। আপনি এই বিয়েটা ভেঙে দিবেন না প্লিজ।
মুন ফারহানের সামনে হাত জোর করে নিলো। ফারহান তার আঙ্গুলের সাহায্যে কপালের কিছু অংশ স্লাইড করে নিলো। ওর মুখে এক অদ্ভুত হাসি, যেটা মুন দেখতে পেলো না। অতঃপর সে পকেটে হাত গুজে বলল,
ডঃ খান, আমি আমার সিদ্ধান্ত বদলাতে পারি তবে আমার শর্ত আছে। তুমি যদি আমার শর্ত মেনে নাও তবেই হবে এই বিয়ে।
বলুন আপনার কি শর্ত?
প্রথম শর্ত, তুমি আমার বাড়ি যেতে পারবে না। আর দ্বিতীয়ত্ব, কখনো আমার সংস্পর্শে আসার চেষ্টাও করবে না। সুযোগ পেলেও না।
ফারহানের কন্ডিশন শুনে মৃদু হাসে মুন। অতঃপর বলে,
আজকে ছয় বছর পর দাঁড়িয়ে আমার জিবনে নিজেকে এত ইম্পরট্যান্ট দেওয়ার কিছু নেই। বাড়িতে যাওয়ার কথা দিতে পারছি না যেহেতু আপনার বাড়িতে আমার বোনের বিয়ে হচ্ছে তাই ও বাড়ি যাবনা তার গ্যারান্টি দিতে পারবো না। তবে আপনি নিশ্চিত থাকতে পারেন আমি কখনোই আপনার সংস্পর্শে আসবো না। সরাসরি জানিয়ে দিচ্ছি ছয় বছর আগে ওটা বয়সের ইনফিসিয়ন ছাড়া আর কিছুই ছিলো। এখন এটা বুঝতে পারি। তাই খুব হাসি পায়। এতে যদি কেউ মনে করে আমি চরিত্রহীন থার্ডক্লাস তাতে আই ডোন্ট কেয়ার।আমার সিদ্ধান্তটা আমি জানিয়ে দিলাম। বাকিটা আমি আমার বাড়ির লোকদের থেকে জেনে নিবো।
Notun Bangla Golpo
কথাগুলো বলে আর এক মুহূর্ত অপেক্ষা করে না মুন। লম্বা পা ফেলে চলে যায়। মুনের চলে যাওয়ার পর ফারহান বলে উঠে,
ইনফিসিয়েশন। তারপরের হেসে উঠে।
বদ্ধ দরজার সামনে দাঁড়িয়ে কাঁদছে চার বছরের একটা কন্যাসন্তান। ওর পাশেই দাঁড়িয়ে মেয়েটাকে শান্ত করার চেষ্টা করছে এক অর্ধবয়স্ক মহিলা। দরজার ওপাশে কি চলছে সেটা সে ভালোই আন্ধাজ করতে পারছে। কিছুক্ষণ পর দরজা খুলে বেড়িয়ে এল একটা যুবক। বয়স তার আটাইশ ঊনত্রিশ হবে। শার্টের বাটনগুলো লাগাতে লাগাতে মেয়েটার সামনে এসে হাটুগেরে বসে তার চোখের জল মুছে দিয়ে মেয়েটাকে কোলে তুলে নিলো।
কি হয়েছে মামনি? এই তো পাপা এসে গেছে। আর কাঁদে না। সোনা মা আমার। যুবকটা মেয়েটার কপালে চুমু একে দেয়ে। সাথে সাথে মেয়েটা তার নাক চেপে ধরে। আর বলে,
পাপা তুমি আবারও ওই পচা গন্ধ পানি খেয়েছো। তুমি জানোনা পাপা এতে আমার কষ্ট।
যুবকটা তার মাথা নিচু করে নিয়ে বলে,
সরি মামনি। দেখো সোনা পাপা খুব তাড়াতাড়ি এসব খাওয়া ছেড়ে দিবে। এখন নিচে চলো।মেয়েটা আবার বলে, মাম্মাম কোথায়? আমি মাম্মামের কাছে যাবো।
যুবকটা শীতল দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে মেয়েটার দিকে। এই মেয়েটা তার মা বলতে পাগল। অথচ তার মা তার দিকে ঘুরেও তাকায় না। পৃথীবিতে এমন সার্থপর মা-ও আছে। যুবকটা মেয়েটাকে নিয়ে ড্রয়িংরুমের দিকে ছুটলো। এই মুহূর্তে সে কিছুতেই মেয়েটাকে তার মায়ের কাছে যেতে দিবে না। পিছন থেকে অর্ধবয়স্ক মহিলাটি ডেকে বলল,
রনি, মিষ্টি কিন্তু এখনো কিছু খায়নি?
হ্যাঁ এই যুবকটি নাম রনি। এই বিশাল সম্রাজ্যের মালিক, মালিক বললে ভুল হবে। মালিকের বাবা। কারন তার এই সম্রাজ্যের মালিক তার চার বছরের মেয়ে মিষ্টি।আর রনি এক অন্ধকারে নিমজ্জিত মানব। মদ আর নারী যার একমাত্র নেশা। তবে মেয়েকে খুব ভালোবাসে। একদিকে তার পৃথীবি আর অন্যদিকে তার মেয়ে। অর্ধবয়স্ক এই মহিলাটির কথা শুনে এবার রনির রাগ হয়। প্রচুর রাগ হয়। পিছনের দিকে ফিরে শক্ত গলায় বলে উঠে,
বাড়িতে এতগুলা লোক থাকতেও কেন আমার মেয়ের ঠিকমত খাওয়া হয়না। তোমরা সবাই আছো কি করতে?
ভদ্রভাবে কথা বলো রনি। ভুলে যেওনা তুমি কার সাথে কথা বলছো?
আওয়াজ নিচে। তুমি ভুলে যেওনা যে তোমার মাথার মাথার উপর যে ছাদটা আছে না সেটাও আমার। শুধু মাত্র কাকার কারনে তোমাকে সহ্য করছি। না হলে তোমার মতো মহিলাদের আমি,, আর কিছু বলল না রনি। কারন দুপুর গড়িয়ে বিকাল হয়েগেছে অথচ তার মেয়েটা এখনো কিছু খায়নি। হসপিটাল থেকে ফেরার সময় নেশা করে বাড়ি ফিরেছে তাই আর মেয়ের খবর নেওয়া হয়নি। তাড়াতাড়ি করে নিচে চলে যায়। তারপরেই বেড়িয়ে আসে রনিও ওয়াইফ। সে তার অধোরে তাচ্ছিল্যের হাসির রেখা টেনে অর্ধবয়স্ক মহিলাটির দিকে তাকিয়ে থাকে।
মুন আজ বাড়িতে ফিরতেই দেখে সকলে বেশ হাসিখুশি। তবে এর কারনটা ওর অজানা নয়। ফারহানদের বাড়ি থেকে হয়তো বিয়ের কথা বলেছে তাই। অর্ণাও আজ অনেক খুশি। এদিকে ফারহান বাড়ি ফিরতেই রওনাক আসে ওর কাছে। আর ওকে জড়িয়ে ধরে বলে,
তুই হঠাৎ বিয়েতে রাজি কেন হলি?
আমার আর মেহরিমার মাঝের ঝামেলা আমরা মিটিয়ে নিয়েছি তাই।
তুই মুনকে কি করে চিনিস? আর ওকে বারবার মেহরিমা কেন বলছিস?
ফারহান কিছু বলতে যাবে তখনি ওর ফোনটা বেজে উঠে। মোবাইল হাতে নিয়ে দেখে কমিশনড স্যারের কল।ফারহান কল রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে বলল,
তোমার সাথে আমার জরুলি কিছু কথা আছে।এখনি আমার বাংলোতে চলে এসো।
ইয়েস স্যার।
ফারহান ফরমাল ড্রেস পরেই বেড়িয়ে পরে। যাওয়ার আগে পলাশকে কল করে। কারন ফারহান সেখানে পলাশকেও নিয়ে যাবে।
কমিশনড স্যারের সামনে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে আছে ফারহান ও পলাশ। আর কমিশনড স্যার সুফায় পায়ের উপর পা তুলে বসে ওদের দুজনের দিকেই তাকিয়ে আছে। কিছু সময় পর তিনি নিজেই ফারহানের উদ্দেশ্যে প্রশ্ন ছুড়ে দিলেন,
তুমি তোমার টিম মেম্বারদের কতটা ভরসা করো?
যতটা আমি নিজেকে করি। আমার টিমের সবাই দেশের জন্যে কাজ করে। দেশের অগ্রগতির জন্যে তারা তাদের জিবন বাজি রাখতে পারে। তাই আমাদের সকলকে আপনি ভরসা করতে পারেন স্যার।
তাহলে তুমি তেমার ব্রাঞ্চের হয়ে কাজ করবে?
সেটাইতো করি স্যার। আমি নামমাত্র সৈনিক। ক্রাইম ব্রাঞ্চ আমাদের ব্যাক্তিগত প্রতিষ্ঠান হলেও এটা থেকে আমরা অনেক কেইসের প্রবলেম সলভ করেছি। এমনকি পুলিশ সিআইডি এরাও মাঝে মাঝে আমাদের হেল্প নেয়।
ঠিক আছে। তারপর কমিশনড স্যার একটা কার্ড বের করে ফারহানের হাতে দিয়ে বলে,
এই হলো আরএন নার্সিংহোম। আমাদের কাছে খবর আছে এখানে বেআইনি কাজ কারবার হয়। তুমি তোমার টিম নিয়ে কাজে লেগে পরো। আশাকরি খুব তাড়াতাড়ি অপরাধীদের ধরতে সক্ষম হবে।
ফারহান কাটটা হাতে নিয়ে সেটা এপিঠ-ওপিঠ করে দেখে নিলো। অতঃপর বলল,
স্যার, যেহেতু এটা এত বড় একটা হসপিটালের ব্যপার তাই আমাদের আইনি সাহায্য লাগতে পারে।
তোমরা সবরকম সাহায্য পাবে তাছাড়া ওখানে আগে থেকেই একজন পুলিশ রয়েছে।
স্যার একটা কথা বলবো যদি কিছু মনে না করেন আপনি? না মানে বলছিলাম কি আপনি তো কেইসের দায়িত্বটা পুলিশের উপর দিতে পারতেন। অপরাধীদের ধরা ইনভেস্টিগেশন করা এসব তো পুলিশের কাজ।
যেখানে ইনভেস্টিগেশন করতে গিয়ে এসিসট্যান্ট পুলিশ কমিশনার প্রাণ হারিয়েছে সেখানে অন্য কোন পুলিশ সাহস পায় না। আর তাছাড়া থানার সমস্ত পুলিশই ওদের কেনা গোলাম।
ওকে স্যার। তাহলে এবার আমরা আসি।
ফারহান ও পলাশ চলে যায়। তবে ওরা কেউই বাড়ি ফিরে না। ওরা সোজা চলে যায় ক্রাইম ব্রাঞ্চ অফিসে আর সেখানে গিয়ে সকলকে যার যার কাজে বুজিয়ে দেয়।
কফিশপে একটা মেয়েকে দেখে হা হয়ে যায় পলাশ। গালে হাত রেখে মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে মেয়েটার দিকে। ওর সামনে বসে আছে ফারহান। ফারহান কফি খাচ্ছে আর মোবাইলে কিছু একটা দেখছে। খানিকক্ষণ বাদে মোবাইল থেকে মাথা তুলে যখন পলাশের দিকে তাকায় ফারহান তখন লক্ষ্য করে পলাশ অবাক হয়ে কিছু দেখছে। পলাশের দৃষ্টি অনুসরণ করে ফারহান ও তাকায় সেদিকে। তখন ওর দৃষ্টি পরে একটা মেয়ের উপর। দেখে বোঝা যাচ্ছে সে কারো জন্য অপেক্ষা করছে। ফারহানের মুখ থেকে অস্ফুটস্বরে বেরিয়ে এলো মেহরিমা।
স্যার, আপনি চিনেন এই ফুলপরিকে?
ফুলপরি। একটু অবাক হয়েই জিগ্যেস করলো ফারহান।
হ্যা। ওকে দেখে তো আমার দিলে প্রেমের রেডিও বেজে উঠেছে। স্যার একটু লাইনটা করে দিননা।
আরো পড়ুন – ভালোবাসার স্মৃতি
পলাশের কথা শুনে অধর চেপে হাসে ফারহান। অতঃপর বলে,
তুমি চাইলে লাইনটা করতেই পারো। তবে এতে আমার কোন সাহায্য পাবে না। আর আমি তোমাকে মানাও করবো না। তারপর চেয়ার ছেড়ে দাঁড়িয়ে বলে,
এবার আমাদের যাওয়া উচিৎ। তুমি চাইলে থাকতে পারো। আড় চোখে মুনের দিকে তাকিয়ে বলল ফারহান। পলাশের এই দৃষ্টি বুঝতে অসুবিধা হলো না। সে স্মিত হেসে মাথা নাড়িয়ে মুনের দিকে তাকালো। আর ফারহান সে ততক্ষণাৎ সেখান থেকে প্রস্থান করলো। পালশ উঠে মুনের দিকে পা বাড়াবে তখনি একটা ছেলে এসে দাঁড়ালো ওর সামনে। ছেলেটাকে দেখে মুনের ঠোঁটে আপনাআপনি হাসি ফুটে উঠে। আর সে উঠে তাকে জড়িয়ে ধরে। ছেলে মুনের মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বলল,
কেমন আছিস পাগলী?
মুন ছেলেটাকে ছেড়ে দিয়ে বলল,
তোকে ছাড়া ভালো থাকি কেমনে বলতো।
তারপর দুজনে দুই চেয়ারে বসে কথোপকথন করতে লাগলো। আর এদিকে ছেলেটাকে দেখে পলাশ দাড়িয়ে পরেছে। ওর মাথায় এখন একটাই প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে ছেলেটা কে? এদিকে ছেলেটার সাথে মুন হেসে কথা বলছে। হঠাৎ ছেলেটার একটা কথায় মুনের হাসি থেমে যায়।
বাড়ি ফিরছিস কবে?
কোন বাড়ি?
তোর নিজের বাড়ি।
আমার কোন বাড়ি নেই। আমি একজন আশ্রিতা। যে অন্যের আশ্রয়ে বেঁচে আছে।
এভাবে কেন বলছিস তুই।
তুই কেন বুঝতে পারছিস না আমি ও বাড়িতে যেতে পারবো না। যতদিন না ওই লোকটাকে আমি শাস্তুি দিতে পারবো। ওনার ভালোমানুষি মুখোশ আমি সবার সামনে খুলে ফেলবো। তারপরেই আমি ও বাড়িতে পা রাখবো। যদিও আমার যাওয়ার কোন ইচ্ছে নেই।
এভাবে কেন বলছিস মুন। বারবার ওই লোকটা বলে সম্বোধন কেন করছিস। বাবা হয় তোর।
বাবা, তাচ্ছিল্যের হাসি হাসলো মুন। তারপর বলল, কবে সে আমার বাবা ছিলো। বলতে পারবি, বাবা হওয়ার কোন দায়িত্বটা পালন করেছে ওই লোকটা। উনি কারো বাবা হতে পারেন না। না হতে পেরেছে ভালো বাবা আদর্শবান স্বামী এবং সুসন্তান। কি করেন না ওনি। মেয়ে পাচার থেকে শুরু করে জাল ওষুধের ব্যবসা। নিজের কুকর্ম ঢাকতে গিয়ে নিজের মাকে খুন করলেন। অথচ উনার সব কুকীর্তির দায় এসে পড়লো আমার গায়ে। একটা নবজাতক কি করে কারো প্রান নিতে পারে। একটা কেউ ভাবে নি। এমনকি যে আমাকে জন্মদিলো সেও ভাবে নি। আমি ইমরান খানের শেষ দেখেই ছাড়বো। রাগে হাত দুটো মুষ্টি বন্ধ করে নিল মুুন। অপর পাশে থাকা ছেলেটা মুনের হাতের উপর হাত রাখল অতঃপর বলল,
ওকে, ওকে কাম ডাউন। এত হাইপার কেন হসছিস।
মুন তার চক্ষুদ্বয় বন্ধকরে নিলো। বেশ জ্বালা করছে। মনে হচ্ছে এখনি ঝড় উঠে আসবে। ছেলেটার দিকে চোখ মেলে তাকাতেই সে বলে উঠলো,
আংকেল, ভদ্র মুখোশের আড়ালে থাকা একটা শয়তান।
তুই বিশ্বাস করিস আমাকে?
নিজের থেকেও বেশী।
মুন আর কিছু বলে না সে অশ্রুসিক্ত নয়নে তাকিয়ে তাকিয়ে থাকে ছেলেটার দিকে। আর ছেলে মুনের একহাত জড়িয়ে ধরে মুনের চোখের দিকে তাকিয়ে থাকে। আর এদিকে পলাশ ভাঙা মন নিয়ে বুকের পা পাশে তার হাতটা রেখে চেয়ারে বসে পরে। নিজেই নিজেকে ধিক্কার জানায়। এই তুই নাকি বসন্তের প্রতীক। তাহলে তোর জিবনে বসন্তের আগমের আগেই কেন গ্রীষ্মের কালবৈশাখী ঝড়ের আভাস এলো। কে এই ছেলেটা। ফুলপরির সাথে ছেলেটার সম্পর্ক কি? কেন তারা একে অপরের দিকে এভাবে তাকিয়ে আছে। না আর কিছু ভাবতে পারছে না পলাশ। স্যারকে জানাতেই হবে। যেই ভাবা সেই কাজ। ফারহানকে কল করে কাঁদো কাঁদো গলায় বলে,
স্যার, মাই হার্ড ইজ ব্রোকেন।
মানে?
স্যার ফুলপরির বয়ফেন্ড আছে। সে এখন তার সাথেই আছে। আমি কি করবো?
ওয়েট আমি আসছি। কল কেটে দেয় ফারহান। আর পলাশ মোবাইলের দিকে তাকিয়ে থাকে। এদিকে মুন আর সেই ছেলেটা দুইজনেই কফি খাচ্ছে। ছেলেটা এবার বলে উঠলো,
এত নার্সিংহোম থাকতে আংকেলের নার্সিংহোমে তোকে জয়েন করতে হলো। তুই ভালো করেই জানিস ওখানে তোর বিপদ অনিবার্য।
পারবে না। ইমরান খান আমার কোন ক্ষতি করবে না। আমার কাছে যতদিন ওই ভিডিওটা আছে ততদিন সে আমার কোন ক্ষতিই করবে না।
সাবধানে থাকিস। আমার তো খুব ভয়ই হচ্ছে তোকে নিয়ে।
ধর পাগল আমার কিচ্ছু হবে না। তাছাড়া আংকেল ও তার দলবলতো আছেই। তারা আমাকে ঠিক প্রটেক্ট করবে।
আমারও বাবার উপর বিশ্বাস আছে।
এদিকে ছেলেটার সাথে মুন জমিয়ে আড্ডা দিচ্ছে। কখন যে ফারহান এসে ওদের সামনে দাঁড়িয়েছে সে খেয়ালই নেই কারোর। ফারহান তখন মুনকে দেখে কফিশপের বাইরে চলে গিয়েছিলো। আবার পলাশের কল পেয়ে ভিতরে আসে। মুনের সাথে ছেলেটাকে দেখে স্মিত হাসে সে। তারপর তাদের সামনে এসে দাঁড়ায়। মুনের যখন মনে হলো কেও ওদের দেখছে তখন সে পাশ ফিরে তাকায়। আর ফারহানকে দেখে বড়সড় শক খায়। ছেলেটাও ওকে দেখে বেশ অবাক হয়। অধোরে স্মিত হাসি ফোটানোর চেষ্টা করে হাতটা বাড়িয়ে দে হ্যান্ডশেক করার জন্য। কিন্তু ফারহান সে রক্তচক্ষু নিয়ে তাকিয়ে থাকে মুনের দিকে। কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকার পর তাচ্ছিল্যের হাসি হাসি অতঃপর বলে,
এখনো সত্যিটা স্বীকার করবে না। অবশ্য তোমাদের কাছ থেকে সত্যি কথা আশা করাই ভুল। মিস্টার আকাশ তালুকদার কোথায় ছিলে এতদিন? নাকি মেহরিমার সাথে সাথে তুমিও লাপাত্তা হয়ে গিয়েছিলে।
তুমি ভুল করছো ফারহান। এখনো সময় আছে সত্যিটা তুমি নিজে খুজে বের করো।
কোন সত্যি কিসের সত্যি হ্যা। কি খুজে বের করবো। আমার রুচি এতটাও খারাপ নয় এরকম একটা থার্ড ক্লাস চরিত্রহীন মেয়ের বিষয়ে জানার কোনো আগ্রহ নেই আমার। কথাগুলো বলেই মুনের দিকে অগ্নি দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বেরিয়ে যায় ফারহান। আর পলাশ হা হয়ে তাকিয়ে থাকে ফারহানের চলে যাওয়ার দিকে।
এটা ফারহান? অবাক হয়ে প্রশ্ন করে আকাশ।
এটা ক্যাপ্টেন ফারহান। গ্রামে আমার সেই ফারহান আর আজ ক্যাপ্টেন ফারহানের সাথে আকাশ পাতাল তফাৎ। বড় করে শ্বাস ফেলে মুন। আর আকাশ তাকিয়ে থাকে মুনের মুখের দিকে।
আরো পড়ুন – মৃত্যুর পরের চিঠি
রাতে বেলকনিতে বসে চাঁদ দেখছে মুন। বেশ অস্বস্তি লাগছে তার। ফারহানের এমন রুড আচরন সে মানতে পারে না। ও কথাগুলো যে মুনকে কতটা পুড়ায় সেটা কি জানে না সে। তাহলে কেন? কেন ফারহান ওকে এতটা কষ্ট দেয়। হ্যা মানছে আমার ভুল হয়েছে তাই বলে কত শাস্তুি দিবে। ছয় বছর কি কম সময় ছিলো। কেন ফারহানের রাহ কমেনা। আকাশ পানে তাকিয়ে বড় করে শ্বাস নিলো মুন। রাতের আধার নামার সাথে সাথে ক্লান্ত শহর টা যেন ঘুমিয়ে পড়েছে চারদিকে নিকষ কালো অন্ধকার। মাথার উপরে থাকা চাঁদ ও তাকে ঘিরে থাকা চন্দ্র গুলোর আলোয় আলোকিত হচ্ছে যেন পুরো শহর। বেলকনি ছেড়ে উঠে দাঁড়াবে আর তখনই ফোনটা বেজে উঠলো। ফোনের স্কিলে আকাশের নাম দেখে একটু হাসার চেষ্টা করলো সে। বন্ধুরা বোধহয় এমনি হয়। সবাই ছেড়ে চলে গেলে বন্ধু হয়ে বন্ধুর পাশে থাকে। মুন কলটা রিসিভ করে কানের কাছে ধরতেই ওপাশ থেকে ভেসে আসলো একটা মিষ্টি সুর।
মন খারাপ করে বসে আছিস তাইতো?
নারে। ভাল্লাগছে না কিছু।
ফারহানকে সত্যিইটা জানিয়ে দেয়।
ও বিশ্বাস করবে না আমায়। বলবে আমি আবার নাটক করছি। আবার অপমান করবে।
ওপাশ থেকে কিছু বলল না। দুজনেই চুপচাপ। কিছুক্ষণ পর আওয়াজ এলো,
কাল নার্সিংহোমে যাচ্ছিস?
হুম।
তাহলে দেখা হচ্ছে। এখন রাখি।
আকাশ কি বলবে ভেবে পাচ্ছিল না। আর মুনের ঘন ঘন শ্বাস নেওয়া ওর বুকের মাঝে একরকম ঝড় তুলে দিয়েছিল। তাই তাড়াতাড়ি কলটা কেটে দিলো।
পরেরদিন নার্সিংহোমে আকাশ আসে। মুন ওর সাথে প্রায় সারাটাদিন কাটিয়ে দেয়। হঠাৎ ওর একটা কাজ পরে যাওয়ায় ও চলে যায়। দিন শেষে বাড়ি ফেরার সময় রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে গাড়ির জন্যে অপেক্ষা করছে মুন। এমন সময় একটা গাড়ি ওর সামনে দিয়ে ফুল স্পিডে চলে যায়। যার ফলে রাস্তায় জমে থাকা ময়লা পানি গিয়ে পরে মুনের গায়ে। মুন চিৎকার করে উঠলে গাড়িটা ব্রেক করে। গাড়িয়ে ভিতর থেকে একটা যুবক নেমে আসে যাকে দেখে মুনের রক্তচক্ষু নিমিষেই শীতল হয়ে যায়।
[পরবর্তী পর্ব আসছে…]